আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি এম ইসহাক বাচ্চুর (৪৫) স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স দৃপ্তি রানীর (রাবেয়া মুন্নি) (৫৭) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার ভোররাতে আমতলী হাসপাতাল সড়কের তার ভাড়াটিয়া বাসায়। নার্সের রহস্যজনক মৃত্যুতে তার সহকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচার দাবী করেছেন।
দৃপ্তি রানী (রাবেয়া মুন্নির) ভাই দীপাঙ্কর মজুমদার বলেন, আমার ভগ্নিপতি একটি মেয়ের সাথে বিগত পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওই মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে আমার বোনকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছিল। তিনি আরো বলেন, আমার বোনের মৃত্যুটা রহস্যজনক। আমি এ ঘটনায় বিচার দাবী করছি।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স দৃপ্তি রানী উপজেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি এম ইসহাক বাচ্চুর সাথে ২০০২ সালে পরকিয়ায় জড়িয়ে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে দৃপ্তি রানী মুসলমান হন। তার নাম রাখা হয় রাবেয়া মুন্নি। বিয়ের কয়েক বছর ভালোই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। ওই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে স্বামী ইসহাক বাচ্চু অন্য এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন এমন অভিযোগ ছিল রাবেয়া মুন্সির এ কথা বলেছেন তার সহকর্মীরা। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই দ্বন্ধ লেগেই থাকতো। কথিত আছে গত এক বছর আগে স্বামী বাচ্চু ওই মেয়েকে বিয়ে করেছেন। মঙ্গলবার রাতে তার (আইনজীবির) এক স্বজন স্ত্রী রাবেয়া মুন্নির কাছে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। বুধবার রাতে এ বিষয় নিয়ে স্বামী- স্ত্রীর মাঝে তুমুল ঝগড়া হয়। সারারাত ঝগড়া শেষে ভোররাতে যার যার মত ঘুমিয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০ টায় স্বামী ইসহাক বাচ্চু ঘুম থেকে জাগেন। কিন্তু তার কক্ষ বাহির থেকে আটকানো ছিল। অনেক ডাকাডাকির পরে মেয়ে ইসরাত জাহান ইভা তার কক্ষ খুলে দেয় বলে জানান ইসহাক বাচ্চু। বাবা ও মেয়ে অন্য একটি কক্ষে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না প্যাচানো ঝুলন্ত অবস্থায় তার স্ত্রী রাবেয়া মুন্নিকে দেখতে পায়। পরে তারা ঝুলন্ত অবস্থা থেকে লাশ নিচে নামিয়ে আনেন এমন দাবী স্বামী ইসহাক বাচ্চুর। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরন করেছে। এ ঘটনায় আমতলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। নার্সের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সহকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এ ঘটনার তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেছেন। এদিকে একটি প্রভাবশালী মহল এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠেপরে লেগেছেন। এ ঘটনার পরপর স্বামী বাচ্চু গা-ঢাকা দিয়েছেন। তার মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র স্ট্যাফ নার্স রাবেয়া মুন্নির (দৃপ্তি রানী) কয়েকজন সহকর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হয়। তারা আরো বলেন, বুধবার রাতে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা নিয়ে অনেক গন্ডগোল হয়েছে।
আইনজীবি এম ইসহাক বাচ্চু বলেন, পারিবারিক একটি বিষয় নিয়ে রাতে আমার সাথে ঝগড়া হয়। সারা রাত আমরা ঘুমাতে পারিনি। ভোররাতে আমি আমার কক্ষে এবং মেয়ে ওর কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল পৌনে ১০ টায় আমি ঘুম থেকে জেগে আমার কক্ষ বাহির থেকে আটকানো দেখতে পাই। ঘরের মধ্যে কারো সারাশব্দ পাইনি। আমার মেয়ে আমার কক্ষের দরজা খুলে দেয়। আমার স্ত্রীকে অন্য একটি কক্ষে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না প্যাচানো ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই এবং আমি ও আমার মেয়ে লাশ নিচে নামিয়ে রাখি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শংঙ্কর প্রসাদ অধিকারী বলেন, নার্স দৃপ্তি রানী (রাবেয়া মুন্নি) রহস্যজনক মৃত্যুটা মেনে নেয়া যায় না। এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা তদন্তপূর্বক পুলিশ প্রশাসনের কাছে খতিয়ে দেখার দাবী জানাই।
আমতলী থানার এসআই মোঃ ফয়সাল বলেন, খবর পেয়ে আমরা আইনজীবির বাসায় গিয়ে লাশ মেঝেতে সোয়ানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছি।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর