ঝালকাঠি সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঝালকাঠির রাজাপুরে মৎস্য বিভাগ ও পুলিশের ইলিশ রক্ষা অভিযানে ধস্তাধস্তি ও মারধরে নিখোঁজের অভিযোগের ঘটনার ১ দিন পর বাখেরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান মৃধার লাশ নদী থেকে উদ্ধার করেছে স্বজনরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে পালট ও নিয়ামতি এলাকার বিষখালির মাঝ নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। খোঁজ নিয়ে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে রাজাপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারি আরিফ ও রাজাপুর থানার এএসআই শহীদ (২) এবং রাজাপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারি আব্দুল বারেক ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে দুটি টিমে ট্রলারে বিষখালি নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানে নামে। স্থানীয় ও ঘটনা প্রত্যক্ষকারীদের অভিযোগ, পালট ও নিয়ামতি এলাকার মাঝ নদীতে ইলিশ শিকারের নামা যুবলীগ নেতা মবিবুর রহমান মৃধাসহ কয়েকজনকে ট্রলারসহ আটকের চেষ্টা চালায় রাজাপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারি আব্দুল বারেকসহ পুলিশের একটি টিম। এসময় অভিযানে দেখে কয়েক ব্যক্তি নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান মৃধা ও তাদের ট্রলার চালককে ধরে অভিযানের ট্রলারে উঠানোর সময় ট্রলার চালকও নদীতে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু যুবলীগ নেতা মবিবুর রহমান মৃধাকে আটক করতে চাইলে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, ধস্তাধস্তি ও মারধরের ঘটনার এক পর্যায় নদীর পানিতে পরে যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান মৃধা নিখোঁজ হয়। কিন্তু যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান মৃধার সহযোগীদের ধারণা ছিল অভিযানে পুলিশ মজিবরকে ধরে নিয়ে গেছে। এসব ঘটনার জেরে উৎসুক জনতা ও স্থানীয়রা নদীর দুই তীরে স্থানীয় লোকজন ঝড়ো হলে নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন অভিযানের ট্রলার। ওই সময় ওই এলাকার নদীতে একাধিক মাছ ধরার নৌকা থাকলেও অভিযানকারীরা কোন জেলে বা নৌকা-জাল আটক বা উদ্ধার করে উত্তর দিকে চলে যায়। পরে যুবলীগ নেতা মবিবুর রহমান মৃধার খোঁজে নামে স্বজনরা, তারা রাতভর জেলার বিভিন্ন থানায় ও মৎস্য অফিসসহ সংশ্লিষ্ট কোন স্থানে তাকে না পেয়ে সকালে নদীতে খোঁজাখুজিঁর এক পর্যায় তার লাশ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযানে অংশ নেয়া রাজাপুর থানার এএসআই শহীদ (২) জানান, সোমবার দুপুরে মৎস্য ও পুলিশ যৌথভাবে ২টি টিমে ভাগ হয়ে এএসআই শহীদের নেতৃত্বে বাদুরতলা থেকে নাপিতেরহাট এলাকায় একটি টিম অভিযান চালায় এবং মৎস্য অফিসের আব্দুল বারেকের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে একটি টিম পালট থেকে অভিযান করেছেন। এসব ঘটনা তাদের জানা নেই। অভিযোগ অস্বীকার করে রাজাপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারি আব্দুল বারেক জানান, সেখানে ওই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তারা অভিযানে যায় নাই। এদিকে ঘটনাস্থল ও লাশ উদ্ধারের স্থান রাজাপুর থানার আওতায় হলেও স্বজনরা সকালে বিষখালি নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে বাখেরগঞ্জের নিয়ামতি তার নিজ এলাকার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় রাজাপুর থানা পুলিশ সেখানে না গিয়ে বাখেরগঞ্জ থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। তবে বাখেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম জানান, মাছ ধরতে বা কিনতে গেলে অভিযানের বোট দেখে নদীতে ঝাপ দিছিলো। তবে কাদের অভিযান ছিলো তা জানা যায়নি। ওসি বলেন, ঘটনাস্থল ও লাশ উদ্ধারের স্থান রাজাপুরের মধ্যে। তাই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার ও মামলা তাদেরই (রাজাপুর থানা পুলিশ) করতে হতো কিন্তু তারা করবে না।
রাজাপুর থানার ওসি জাহিদ হোসেন জানান, যেহেতু লাশ নিয়ে গেছে বাখেরগঞ্জ থানা এলাকার নিয়ামতি তাই ওই থানার পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। ওসি জানান, নদীতে নৌ পুলিশ, কোর্ডও অভিযান চালায়; রাজাপুর থানা পুলিশের সাথে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। পুলিশে কাউকে ধাওয়াও দেয়নি বা এ রকম কোন ঘটনা দেখেওনি।
আরআর/এমআর