রাঙ্গাবালী(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
কর্মস্থলে ৪ বছর ধরে অনিয়মিত দুই কর্মচারী। কখনো মাসে এক-দুইদিন আসেন, কখনো তাও আসেন না। আসলেও কাজ সেরেই আবার চলে যান। তবুও তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব রয়েছেন। ফলে তারাও আছেন বহাল তবিয়তে। ওই দুই কর্মচারী হলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মুখরবান্দা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মো. ওয়ালিউদ্দিন ও পরিবার কল্যান সহকারী বিলকিস নাছিমা বানু। ওয়ালিউদ্দিনের বাড়ি কলাপাড়া উপজেলার হাজিপুর এবং বিলকিসের বাড়ি ওই কমিউনিটি ক্লিনিক সংলগ্ন মাঝের দেওর গ্রামে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে সারাদেশের মত ২০১২ সালে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মুখরবান্দা ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। ওই ক্লিনিকের কার্যক্রমের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে মো. ওয়ালিউদ্দিন ও পরিবার কল্যান সহকারী হিসেবে বিলকিস নাছিমা বানু যোগদান করেন। নিয়মানুযায়ী সপ্তাহে শনি থেকে সোমবার তিনদিন ওয়ালিউদ্দিন এবং মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার তিনদিন বিলকিস ক্লিনিকে উপস্থিত থেকে সাধারণ মানুষদের সেবা দেওয়ার কথা। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, ওয়ালিউদ্দিন ও বিলকিসের ক্লিনিকে আসা-যাওয়া নেই। ফলে ওই ক্লিনিকে গিয়ে মানুষ আশানুরূপ সেবাটুকুও পাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়। তারা কেউই জানেন না ওই দুই কর্মচারী এই ক্লিনিকে চাকুরি করে কিনা।
অনুসন্ধানে ওই দুই কর্মচারী চার বছর ধরে কর্মস্থলে অনিয়মিত হওয়ার তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে চলতি ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ চার বছরে ক্লিনিকে ওয়ালিউদ্দিন ও বিলকিস অনিয়মিত। শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরিদর্শনে এলে এবং কাগজ-কলমে কাজগুলো বৈধ করতে একদিন-দুইদিন তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। ওইসময়ই হাজিরা খাতায় তারা একসঙ্গে পেছনের দিনের স্বাক্ষর করে যান। তবে একসঙ্গেই ওয়ালিউদ্দিন হাজিরা খাতায় অনেকদিনের স্বাক্ষর দিয়ে জালিয়াতি করাকালীন ধারণ করা ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া জালিয়াতি করার আগেই ওয়ালিউদ্দিন ও বিলকিসের স্বাক্ষরবিহীন গত চার বছরের বেশ কয়েক মাসের হাজিরা খাতার ছবিও এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
জানতে চাইলে ওই ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো. নাঈমুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যান সহকারীর অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়টি এ্যাসিস্ট্যান্ট হেলথ ইন্সেপেক্টরকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন যে, তারা অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে চাইলে নিষেধ করবে। তাই আমি এ মাসে তাদেরকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে নিষেধ করলে আমার সঙ্গে বাকবিত-া করেন।’
অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সহকারী ওয়ালিউদ্দিন বলেন, ‘আপনি আমার নম্বর পেলেন কোথায়? আপনাকে এই অভিযোগ দিছে কে? আমি যখন সুযোগ পাই তখন হাসপাতালে যাই। আমি অনুপস্থিত থাকি না, আমার কাজ আমি করি।’ হাজিরা খাতায় অনেকদিনের স্বাক্ষর একসঙ্গে দেওয়ার ভিডিও আছে জানালে তিনি বলেন, ‘কে বলছে আমি একসঙ্গে স্বাক্ষর দিছি। আরে দূর। ভিডিও কিসের? আপনি কখন ভিডিও নিলেন। আমার অথরেটি আছে, কর্তৃপক্ষ আছে। তারাই দেখতেছে। আমি যদি মাঠে না থাকি আপনার ক্ষমতা থাকলে যা ইচ্ছে, তাই করেন।’ আরেক অভিযুক্ত পরিবার কল্যান সহকারী বিলকিস নাছিমা বানু বলেন, ‘আমি অসুস্থ্য, বৃদ্ধ বয়স। কমিউনিটি ক্লিনিক অনেকদিন বন্ধ ছিল। এইবার প্রধানমন্ত্রী ধরছে, আমরা টের্নিং দিয়া এহন আমরা ঠিকমত থাকি। আমি আপনাকে পাবো কই। আমি আপনার সাথে দেখা করবো। আপনি আমার উপকার করেন। যদি টাকা-টুকা লাগে, তাও বলেন। মহিলা মানুষ এসব নিয়ে ঝামেলা করবো না। সামনের মাসে অবসরে চলে যাবো।’
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডা: মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবো। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএইচ/এমআর