কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
স্থাপনের ৪০ বছরেও প্রাণ ফিরে আসেনি কলাপাড়ার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠানে। উদ্ভাবন হয়নি নতুন কোন জাতের মাছ। ফি মাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও প্রতিষ্ঠানটি দাঁড়াতে পারছে না। প্রয়োজনীয় লোকবল সঙ্কট, যন্ত্রপাতি ও সদিচ্ছার অভাবে ধুকছে এ প্রতিষ্ঠানটি। মৎস্য চাষীরা এর থেকে তেমন কোন সুফল পায়নি। মাঝখান দিয়ে বিএফডিসি প্রতিষ্ঠানের ১৩টি নৌযান (ট্রলার) গায়েব হয়ে গেছে। বরফকলটি এক ভাড়াটে কয়েক বছর চালিয়ে অকেজো করে দিয়েছে। এখন নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি। অথচ ভাড়াটিয়া অন্য জায়গায় বরফকল করে করছেন চুটিয়ে ব্যবসা। বরফকলসহ ল্যান্ডিং স্টেশনটি ভগ্নদশার ভবনে পরিণত হয়েছে। বাসাবাড়ি করে থাকছেন এক কর্মচারী। আবার অটোচালকরা এটি গ্যারেজে পরিণত করেছে। যেন কারও দায় নেই।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক সহায়তায় চার কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় বিএফডিসি’র উদ্যোগে উপকূলের মৎস্যজীবীদের মাছ আহরণ, সংরক্ষণ, মৎস্য রফতানী এবং ন্যায্যমূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি নির্মান করা হয়। এখানে মৎস্য অবতরন কেন্দ্র, একটি হিমাগার, বিক্রয়কেন্দ্র, মাছ ধরার ১৩ টি নৌযান, ন্যায্যমূল্যে জেলেদের জন্য বরফ উৎপাদন কল, নৌযান মেরামতের জন্য মিনি ডক, ওয়ার্কসপ, তেল সংরক্ষনের জন্য একটি অয়েল ট্যাঙ্কার স্থাপন করা হয়। তৎকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, চরম অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর অনিয়মের কারনে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০০ সালে মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের কাছে এ প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি বিএফডিসি’র উদ্যোগে কোটি টাকা ব্যয় গবেষণার জন্য স্থাপন করা হয় ল্যাবরেটরী। নিয়োগ দেয়া হয় জনবল। খনন করা হয় বিরাট পুকুর ও সেড। কিন্তু এ পর্যন্তই বলতে গেলে শেষ। নতুন মাছের কোন জাত উদ্ভাবন না করে বছরের পর বছর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ৩৩ জাতের মাছের মধ্যে তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেল ও শরপুটি এই ৫টি মাছ স্থানীয় মৎস্য চাষীদের চাষ করার জন্য উৎসাহিত করছে। তবে উপজেলার সকল মৎস্যচাষীরা জানেই না মাছ চাষের জন্য এখানে কি ধরনের সহায়তা পাওয়া যায়।
এখানকার কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে আন্ধারমানিক নদীর বিভিন্ন মোহনা থেকে পানি সংগ্রহ করে লবণাক্ততা পরীক্ষা করে কাজ চলছে বহু আগে থেকে। তারা জানান, জনবল সংকট, প্রযোজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাাকার পাশাপাশি ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর অভাব এখানে রয়েছে। এখানে একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, একাধিক উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, গবেষণা সহকারী, ক্ষেত্র সহকারী একজন, এক জন এমএলএসএস ও গাড়ি চালকের পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত রয়েছে একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, একজন উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, একজন ক্ষেত্র সহকারী, একজন কম্পিউটার অপারেটর ও এমএলএসএস। লোকবল সঙ্কট রয়েছে। নেই ল্যাবরেটরি উপযোগী ভাল ভবন। গবেষণার জন্য ল্যাবরেটরীতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্কট রয়েছে। ২০-২৫টি পুকুর দরকার হলেও এখানে রয়েছে মাত্র নয়টি ছোট পুকুর ও একটি খাল। বর্তমানে তাও পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। তবে বর্তমানে এখানে বিলুপ্ত প্রজাতির কাওন মাগুর মাছ পুকুরে চাষের জন্য গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কলাপাড়া মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউটের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম তানবিরুল হক সাংবাদিকদের জানান, মূলত এটি একটি নদী ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। নানাবিধ সমস্যা থাকলেও শীঘ্রই নতুন ভবনসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। আর বরফকলটির ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার মতো পড়ে থাকলেও এনিয়ে ভাড়াটিয়া মামলা করেছে। তাই জটিলতা রয়েছে। এছাড়া গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল পদায়নের পক্রিয়াও চলছে। ল্যাবরেটরীতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো সংকটের কারনে গবেষণা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। ল্যাবরেটরি উপযোগী আধুনিক ভবনও হবে বলে এ কর্মকর্তা জানালেন।
এমইউএম/এমআর