কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
জীবনের শেষ নিঃশ^াসটি নেয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ করেছেন। ২১টি বছর ছিলেন কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। যখন দলটি এককভাবে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিজয়লাভ করে তখনই এ মানুষটির (২০০৯ সালে) ইহকালের ইতি ঘটে। অসুখে ভুগেছেন অনেকদিন। উন্নত তো দুরের কথা, সাধারণ চিকিৎসাও জোটেনি ঠিকঠাক। পুরো নাম দেলোয়ার হোসেন বিশ^াস। চরধুলাসার গ্রামে বাড়ি। জনশ্রুতি আছে, জমিজমা পর্যন্ত বিক্রি দিয়ে দলের যোগান দিয়েছেন। কাদামাটি পেরিয়ে উপজেলা সদরে এসে দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিতেন। নেতৃত্ব দিতেন। মারধর লাঞ্ছিত হয়েছেন বহুবার। চারদলীয় জোটের রোষানলে মামলার শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। সন্তানদের খোঁজ-খবর না রাখলেও দলটির ঠিকমতো খোঁজ রাখতেন। মানুষটি এখন তার কর্মের মধ্য দিয়ে পুরনো, নিবেদিত কর্মী-সমর্থকের মনে গেঁেথ আছেন। কিন্তু দেলোয়ার বিশ^াসের সন্তানদের তো জীবন আর চলে না। বাস্তবতা বড়ই নির্মম। চার ছেলে ও ৭ মেয়ে রেখে গেছেন। শুধু বাড়ির জমিটুকু রয়েছে। এখন সন্তানদের জীবন-জীবিকা আর চলে না। চার ছেলের মধ্যে আবার আক্তার হোসেন বিশ^াস প্রতিবন্ধী।
তিনি জানান, ১৯৭৮ সালে জন্ম তার। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে চাঁদনী সপ্তম শ্রেণিতে, মেজ লাবনী ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট্ট আহাদের বয়স মাত্র আড়াই বছর। স্ত্র তাজিনুর গৃহিনী। আক্তার জানান, ১২/১৩ বছর বয়সে একবার জ¦রে আক্রান্ত হয়ে দুই হাত, দুই পা অবশ হয়ে যায়। এরপওে এ অবস্থা। এখন শক্তি পায়না। তারপরও পেটের যোগান, সন্তানের স্কুলের লেখাপড়ার যোগান দিতে ভাড়ায় অটোবাইক চালায়। তাও এক বেলা পরে আর পারছে না। শরীরে কুলোয় না। উপোস, অর্ধাহার নিত্যদিন। ২০০৫ সালে বাবলাতলা বাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লোপে একটি চায়ের দোকান করেছিলেন। সেখানে স্ত্রী-স্বামী মিলে দোকান করতেন। পেছনে থাকতেন। তাও কয়েকমাস আগে একটি মহল ভেঙ্গে দিয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন অসহায়। বাড়িতে গিয়ে ছাপড়া দিয়ে থাকেন। জীবনের সব কিছু যেন ধোয়াশা হয়ে গেছে। এখন আর স্বপ্ন নেই কোন। দেখেওনা ভবিষ্যতের কোন স্বপ্ন। বাবার প্রিয় দল আওয়ামী লীগ। মনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। মার্কা নৌকা। স্লোগান জয়বাংলা। এর বাইরে কিছু বোঝেন না। চরম অসহায়ত্ব আক্তারকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে। এখন কী যে করবে তাও ভেবে পায়না। শরীরে একটু ঠান্ডা লাগলেই অচল হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের নিবেদিত এক পিতার সন্তান হয়ে এমন অবর্ননীয় দুঃখ কষ্টের কারণে বাবার প্রতিও তার কষ্ট হয়। কেন তাঁদের এ পরিণতি। নিয়তিকেও মানতে পারছে না। শুধু পানি ঝরানো ঝাপসা চোখে তাকিয়ে হতাশার সুরে বলেন, দলটির বহু হাইব্রিড যাদের চাল-চুলো ছিল না। ছিল না পায়ের সেন্ডেল কিংবা জুতো তারাও লাখোপতি থেকে কোটি পতি বনে গেছেন। আর আমরা জীবনের জন্য জীবিকার লড়াই তাও করতে পারছিনা। যেন চলন্ত ট্রেন এখন আওয়ামী লীগ, যার যাত্রী হয়ে ছিটকে পড়ছি পিচ ঢালা রাস্তায়। তবে আক্ষেপের কথাও বলেন, এই হতভাগা মানুষটির ভাষ্য, ‘ মোগো প্রধানমন্ত্রী বাড়ির কাছের রাস্তা পাকা করছেন। অটো চালানোর সুযোগ পাই। কারেন্ট দিছেন, রাতে আলো দেখি। ওই আলোতে মূল আওয়ামী লীগারদের সাইজ করার পরিকল্পনা করেন আওয়ামী লীগের শত্রুরা। যারা অনুপ্রবেশকারীর মতো দলটিতে ঢুকে গেছে।’ এ মানুষটি জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, কয়ডা লেখবেন জাইননেন, মোর নম্বরে-০১৭২৫৯৬৭৩৭৫। মানুষটি কষ্টের কথা বলতে যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। এমনকি আক্তার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির কোন সহায়তাও পায়না। জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা পর্যন্ত।
এমইউএম/এমআর