বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বানারীপাড়ায় ইলিশ’র প্রজনন মৌসুমে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে সন্ধ্যা নদীতে ঢিলেডালা অভিযান পরিচালনা করার সময় জেলেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও আপত্তিকর বকাঝকা করায় এলাকায় তোলপার শুরু হয়েছে।
সোমবার বেলা পৌনে ২টার দিকে উপজেলার মিরেরহাট সেলিম বালীর ইটভাটা সংলগ্ন নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটার পর এলাকায় তোলপার শুরু হয়েছে। এ ঘটনার পর বিকেল থেকেই মিরেরহাট এলাকার সন্ধ্যা নদীতে পুলিশ’র সহায়তায় মৎস্য অভিযান যোরদার করা হলেও তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িতদের কেউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ।
অপরদিকে খবর পেয়ে বরিশাল-২ আসনের এমপি মো.শাহে আলম ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌছার পূর্বেই ইটপাটকেল নিক্ষেপকরী ক্ষুদে জেলেরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গা-ঢাকা দিয়েছে।
এ বিষয়ের সত্যতা শ^ীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.জামাল হোসেন বলেন, ইলিশ’র প্রজনন মৌসুমে সন্ধ্যা নদীর ইলিশ নিধন বন্ধ করারা জন্য তাদের পক্ষ থেকে ৯ অক্টোবরের পূর্বে এলাকা ভিত্তিক জেলেদের সতর্ক করেছেন। এপরেও তারা একটু সুযোগ পেলেই কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ নিধন করছেন। মৎস্য কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, সোমবার বেলা পৌনে ২টার দিকে উপজেলার মিরেরহাট সেলিম বালীর ইটভাটা এলাকায় অভিযান চালানোর সময় তারা ৫/৬ কারেন্ট জাল ও ভাষমান অবস্থায় দু’টি নৌকা আটক করেন। এ সময় মিরেরহাট সেলিম বালীর ইটভাটা এলাকার ২০-২৫ জন ক্ষুদে (১৫-১৭ বছর বয়সের) জেলেরা নদীর তীর থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল ছুরতে থাকার পাশাপাশি তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত তারা অতিরিক্ত পুলিশ চেয়ে বরিশাল-২ আসনের এমপি মো.শাহে আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ্ সাদীদ ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো.খলিলুর রহমানকে উক্ত বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে দলীয় নেতা-কর্মী সহ বরিশাল-২ আসনের এমপি মো.শাহে আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ্ সাদীদ ও ওসি (তদন্ত) মো.জাফর আহম্মেদ’র নেতেৃত্বে একদল পুলিশ পৃথক ভাবে ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই ইটপাটকেল নিক্ষেপকারী জেলেরা ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গা-ঢাকা দেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ্ সাদীদ বলেন, ইট পাটকেল নিক্ষেপ ঘটানায় জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।
এদিকে বরিশাল-২ আসনের এমপি মো.শাহে আলম মা ইলিশ রক্ষা করার জন্য সন্ধ্যা নদীর দুই তীরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরেও জেলেরা একটু সুযোগ পেলেই সন্ধ্যা নদীতে জাল ফেলে মা ইলিশ নিধন করছেন।
অপরদিকে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের অপরিকল্পিত অভিযানের কারণে সন্ধ্যা নদীর মা ইলিশ নিধন বন্ধ করতে পরছেন না বলে এলাকায় অভিযোগ ওঠেছে। অবশ্য এ অভিযোগ মানতে রাজি হননি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.জামাল হোসেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যা নদীর মা ইলিশ রক্ষা করতে তারা দুটি ট্রলারে ও একটি স্পিডবোডে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রে সরকারী ভাবে তাদের বরাদ্ধকৃত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা দূরুহ হয়ে পরার কারণে পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্ধ হিসেবে একটি স্প্রিড বোড দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জনবল সংকট ও নৌপথে অভিযান পরিচালানা করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রলার না থাকার কারণে তারা কাঙ্খিত অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না।
এদিকে এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, সন্ধ্যা নদীর দুই তীরের ৬টি পয়েন্টে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নজরদারী না থাকার কারণে মা ইলিশ নিধন বন্ধ করতে ব্যার্থ হচ্ছেন। তারা জানান, সন্ধ্যা নদীর গুরুত্বপূর্ণ ৬টি পয়েন্টে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নজরদারী না থাকার কারণে সুযোগ সন্ধানী জেলেরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জন প্রতিনিধিদের ছত্র-ছায়ায় সুযোগ বুঝে কারেন্ট জাল দিয়ে মা ইলিশ নিধন করছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ্ সাদীদ বলেন, আমরা এ ব্যাপারে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জন প্রতিনিধিদের প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করে দিয়েছি। তাদের এলাকায় কেউ যদি কারেন্ট জাল দিয়ে মা ইলিশ নিধন করেন, তা হলে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জিএমআর/এমআর