কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
মাছুমের বয়স এখন ১৭ বছর। কিন্তু হাত, গলা কিংবা মুখমন্ডলে রয়ে গেছে ক্ষতচিহ্ন। চার বছরের শিশু থাকাকালে ঘুমন্ত অবস্থায় এসিড ছোড়া হয়েছিল। তার নানীর সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল। নানী গোলবানুও ঝলসে যায়। গোলবানু মারা গেছেন সাত বছর আগে। নাতি কিংবা নিজের শরীওে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় বিচার চাইতে পারেন নি। বৃদ্ধা মা ও শিশু সন্তানের এমন সর্বনাশের ঘটনায় ১৩ বছর পরে মামলা করেছেন মাছুমের মা বিধবা নিলুফা বেগম। মামলাটি আদালতের নির্দেশে ২৩ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া থানায় রুজু করা হয়েছে। একারনে এখন ফের প্রাণনাশের হুমকিতে পড়েছে নিলুফা বেগম। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটেবাড়িসহ চাষাবাদের জমি পর্যন্ত দখল করে নেয়া হয়েছে। আট বছর পরে ফের বাড়িতে ফিরেছে। কিন্তু পুর্ণ দখল পায়নি। পুকুরের পাড়ে একটি ঘর তুলেছেন। ফের এখন সেখান থেকে উচ্ছেদের জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিলুফা এসব বলে অঝোর ধারায় কান্না করেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোনের মেয়ে মরিয়ম বেগম। বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের পহেলা মার্চ রাতে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় চার বছরের শিশু মাছুম ও নিলুফার মা গোলবানুর শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে। এদের অভিযোগ পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর হাওলাদার, সেলিম হাওলাদার, আঃ আজিজ শরীফ, হাবিব ফকির, আঃ মজিদ শরীফ ও খালেক পাহোলান এ এসিড নিক্ষেপের সাথে জড়িত। শুধু তাই নয়, শিশু সন্তান ও মায়ের চিকিৎসার জন্য সে যখন হাসপাতালে, তখন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ঘর থেকে নামিয়ে দেয়। লুটে নেয় ঘরের মালামাল, পুকুরের মাছ। কেটে ফেলে বাড়ির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ওদের অব্যাহত হুমকিতে দীর্ঘ বছর পাঁচসন্তান নিয়ে ঘর ছাড়া থাকায় মামলা করতে পারেন নি।
নিলুফা বেগম জানান, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঢাকায় কাজ করেছেন। ইট ভেঙ্গেছেন। মহিপুরে জেলেদের টাইগার চিংড়ি মাছ বাছাইয়ের কাজ করেছেন। ছেলেরা একটু বড় হওয়ায় তারা কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এখন ভয় উপেক্ষা করে জীবনের শেষলগ্নে স্বামীর ভিটায় গিয়ে দেখেন তা দখল করে নিয়েছে হাজীপুরের খালেক পাহলান। জীবনের শেষলগ্নে এসে স্বামীর ভিটা রক্ষা ও সন্তান ও মায়ের উপর এসিড নিক্ষেপের বিচার দেখে যাওয়ার ইচ্ছা নিলুফা বেগমের।
তিনি জানান, মৃত্যুর হুমকি উপেক্ষা করে ১৭ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছয় জনের নামে মামলা দায়ের করলে আদালত কলাপাড়া থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এ মামলা দায়েরের পরই তাকে আবার হুমকি দিচ্ছেন মামলার আসামীরা। এঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে জিডি করেন। বর্তমানে তিনি ও তার সন্তানরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এজন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুর রহমান বলেন, যেহেতু দীর্ঘ বছর আগের একটি স্পর্শকাতর মামলা। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ঘটনা যদি সত্যি হলে তাহলে জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
এমইউএম/এমআর