ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
খুব শিগগিরই বিশেষ লক্ষ্য সামনে রেখে বিশেষ অভিযানে নামতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে দুদক সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা তৈরি করা শুরু করেছে। এমনকি তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদেরও হিসাব নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এমপি-মন্ত্রীদের হলফনামাও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেখানে অসংগতি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুদক সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রভাবশালী এবং শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের ধরলেই দুর্নীতির চিত্র অনেকটা পাল্টে যাবে। ওই কারণে আর শুধু চুনোপুঁটি নয়, প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের ধরতে দুদক চলতি মাসেই মাঠে নামবে। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুদকের অভিযানের ব্যাপারে সরকারের ওপর মহল থেকে সবুজ সংকেত রয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পরপরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা রয়েছে। এখন বড় ধরনের দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করে সরকারের পাশাপাশি নিজেদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করতে চায় দুদক। ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালনায় যুক্ত করা হয়েছে পুলিশের সশস্ত্র ইউনিট। গঠন করা হয়েছে চৌকস এনফোর্সমেন্ট টিম। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করতে ওসব সশস্ত্র ইউনিট ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুদকে কয়েক হাজার অভিযোগ এসেছে। ওসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক কাজই এগিয়ে আনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি তালিকা প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে হলফনামা যাচাই-বাছাই করে কয়েকজন প্রভাবশালীর ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত অর্থ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সূত্র আরো জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার ছিল। যার অন্যতম ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। যেখানে বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ। দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্মপরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি আরো জোরদার করবে।’ তাছাড়া নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রায় সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
এদিকে দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম জানান, শুধু চুনোপুঁটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো হবে না। এবারে আমাদের রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। যেখানে সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেখানে আমাদের কাজ অনেক বেড়ে যায়। মানুষ এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, আমরা যদি এখন এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে না পারি তাহলে তা হবে আমাদের ব্যর্থতা। শিগগিরই পুরো কমিশন কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা কাউকে আর ছাড় দিতে চাই না। আমাদের অফিশিয়াল কাজের পরিধি ও লোকবল দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এখন কাজের মাধ্যমে দক্ষতা ও আন্তরিকতা প্রমাণের সুযোগ এসেছে।’
অন্যদিকে সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আগের থেকে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। কারণ বর্তমান সরকারের ম্যান্ডেট ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান। আমরা প্রত্যাশা করি সরকার আমাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করবে।’ ওয়েবসাইট থেকে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা হলফনামা নিয়ে কী করব ১৫-১৬ জানুয়ারির পর দেখতে পারবেন। এখানে মন্ত্রীদের বর্তমান আর সাবেক বলে কথা নেই।’
এফএন/এমআর