রাজবাড়ী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
হঠাৎ করে বিগত ৮-১০ দিন ধরে রাজবাড়ীতে বেড়েছে পদ্মার পানি। ফলে ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মার পেটে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি, স্থাপনা ও শত শত একর ফসলি জমি। জেলার নদী তীরবর্তী সদর, গোয়ালন্দ ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বহু ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি।
স্থানীয়রা বলছে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা কম। সর্বস্ব হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা নদী পাড়ের অসহায় হাজারো মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে এখন পৌঁছেনি কোনো ধরনের সহায়তা। ভাঙন ঠেকাতে ২৫০ কেজি ওজনের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে নদীতে তীব্র ¯্রােত থাকায় তাতেও মিলছে না সুফল এমন অভিযোগ নদী পাড়ের মানুষের। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে অনেক গ্রাম।
নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা। এ ছাড়া নদী গর্ভে চলে গেছে কৃষকের ফসলসহ বহু জমি। এখনই নদীশাসনের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। ভাঙন বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে কাজের পরিধি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এবারের বর্ষা মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার ১৯টি পয়েন্টে দেখা দেয় ভাঙন।
এ ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের। সদরের অন্তমোড় এলাকার আবদুর রাজ্জাক (৫০) বলেন, এ পর্যন্ত ৪ বার আমার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে আছি। প্রতি বছর নদী সবকিছু কেড়ে নেয়। এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বররা আমাদের কোনো খবর নেয় না। কৃষক মো. তমিজ জানান, নদীর পানিতে এই এলাকার সব ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। অনেক জমির ফুলকপি, টমেটো ও ধানের চারা তলিয়ে গেছে। দেবগ্রাম ইউনিয়নের যুবক ফারুক সেখ বলেন, ভাঙন ঠেকাতে যে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে তা ¯্রােতে তলিয়ে যাচ্ছে। আমরা নদী পাড়ের মানুষেরা চাই একটি স্থায়ী সমাধান। প্রতিবছর ভাঙনের কারণে আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাই।
গোয়ালন্দ ছোট ভাকলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন জানান, হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মা নদীর পানি। এতে গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলাসহ কয়েকটি গ্রামের অনেক ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যে পরিমাণ জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। শিগগির যদি নদীর ভাঙন ঠেকানো না যায় তাহলে বেড়িবাঁধ হুমকিতে মুখে পড়বে। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান অঙ্কুর জানান, রাজবাড়ী জেলা সদরের ৭ কিলোমিটার অংশে প্রকল্পের কাজ চলছে। পাশাপাশি ঝুঁকিতে আছে আরও সাড়ে ৪ কিলোমিটার। ঝুঁকিতে থাকা এসব অংশ প্রকল্পের আওতায় আনতে ডিপিপির কাজ চলছে। গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটার অংশে ভাঙন চলছে। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ। সদরের মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো রক্ষায় গত জুন মাসে ১২ হাজার ও বর্তমানে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। প্রয়োজনে কাজের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
এফএন/এমআর