ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি (সামষ্টিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশতেই থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন এডিবি ঢাকা মিশনের প্রধান মনমোহন প্রকাশ।
তিনি বলেছেন, এর জন্য বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রাস্তা, বন্দর এবং পদ্মাসেতুসহ বড় প্রকল্পগুলো এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। সেইসঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে।
এডিবির পূর্বাভাস, দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তিশালী অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে শিল্পখাত। একইসঙ্গে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ২০১৯-২০ অর্থবছরেও চীন, হংকং, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশ। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবি কার্যালয়ে প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৯ আপডেট প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। জাতীয় বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে আট দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও ভঙ্গুর অবকাঠামো ও দক্ষ জনবলের অভাবে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কারণে এটা পূরণ হবে না বলে এই প্রতিবেদনে জানানো হয়। তবে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্যের চেয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন কম হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা বাংলাদেশই। এ ছাড়া প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকে শুধু পোশাক খাতের ওপর নির্ভর করলে হবে না। একইসঙ্গে শুধু ঢাকা কেন্দ্রীক উন্নয়ন করলে হবে না। ঢাকাকে ফাঁকা করতে হবে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮ শতাংশে। অন্যদিকে, একইসময়ে চীন ৬ দশমিক ২, হংকং ০ দশমিক ৩, কোরিয়া ২ দশমিক ১, ইন্দোনেশিয়া ৫ দশমিক ১, মালয়েশিয়া ৪ দশমিক ৫, ফিলিপাইন ৬ দশমিক ০, সিঙ্গাপুর ০ দশমিক ৭, থাইল্যান্ড ৩ দশমিক ০ ও ভিয়েতনাম ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ৬ দশমিক ৫ ও পাকিস্তান ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। আজারবাইজান ২ দশমিক ৬, কাজাকিস্তান ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এ ছাড়া ফিজি ৩ দশমিক ২ ও পাপুয়া নিউ গিনি ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
বুধবারের অনুষ্ঠানে এডিবি ঢাকা মিশনের প্রধান মনমোহন প্রকাশ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ জিডিপি অর্জনে নিচের দিকে থাকলেও বাংলাদেশ সব সেক্টরে ভালো করায় দেশটির অবস্থান ওপরের দিকে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অগ্রগামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ, সহজ মুদ্রানীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে সংস্কার কার্যক্রম ও অবকাঠামো খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ার কারণে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
তিনি বলেন, এডিবি মনে করছে শিল্পখাতের উন্নয়নের ফলে এ প্রবৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস সেক্টরে পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ১০ শতাংশের ওপরে জিডিপি অর্জন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে এখন ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। তবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা হলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মনমোহন বলেন, বাংলাদেশের মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- রপ্তানি বহুমুখীকরণ, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য, বেসরকারিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, মানবসম্পদ, ভ্যাট আইনের কার্যকর প্রয়োগ ইত্যাদি। দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সুশাসনের জন্য এটা খুবই ফলপ্রসূ হবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। তবে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। থেমে গেলে হবে না। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। পাশাপাশি উচ্চতর প্রবাসী আয়ের কারণে বাড়বে ভোগ ব্যয়। একইসঙ্গে সহজ মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারিখাতে ঋণপ্রবাহও বাড়বে। ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত করতে চলমান সংস্কার এবং অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগের সুবাদেও বাড়বে প্রবৃদ্ধি। একইসময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন ও ভ্যাটের আওতা বাড়ার কারণে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে বলে মনে করে এডিবি। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। যা আগে ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। যা মূল পূর্বাভাসে ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সবমিলে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাতের অংশ থাকবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এদিকে, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি এবং ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।
এফএন/এমআর