আমতলী প্রতিনিধি।
তালতলী উপজেলার কাজিরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে সব শ্রেনির পাঠদান কার্যক্রম। ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী নিচ্ছে ২য় শ্রেনীর ক্লাশ। এতে করে শিক্ষার গুণগতমান অর্জন বিগ্নিত হচ্ছে এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। দ্রুত শিক্ষক দেয়ার দাবী জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
জানাগেছে.১৯৬৬ সালে তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নে কাজিরখাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বিদ্যালয়ে ২০১৫ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। বেশ সুনামের সাথেই চলে আসছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। বিদ্যালয়ে ১৪৯ শিক্ষার্থী রয়েছে।পরিপাটি ও সাজানো গোছানো বিদ্যালয়টিতে পাঁচজন শিক্ষকের পদ থাকলেও গত দের বছর ধরে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছে।গত মাসে কাজী মজিবুর রহমান নামের একজনকে ডিপুটিশনে দেয়া হয়। এখন দুইজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চললেও তা যথেষ্ট নয়। এতে হিমসীম খেতে হচ্ছে ওই শিক্ষকদের।অফিসিয়াল কাজে একজন উপজেলা সদরে চলে গেছে একজন শিক্ষক দিয়েই চালাতে হয় পাঠদান। নিরুপায় হয়ে ওই শিক্ষকরা পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী দিয়ে চালাচ্ছেন শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর পাঠদান।শিক্ষক সংঙ্কটের কারনে ঠিকমত ওই বিদ্যালয়ে পাঠদান হচ্ছে না। এতে শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষকরা। উপজেলা সদর থেকে তুলনামূলক দুর্গম এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় কোনো শিক্ষকই এখানে বেশি দিন থাকেন না। এ কারণে শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় অভিভাবকদের। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার গুণগতমান অর্জিত হচ্ছে না।
বুধবার বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অত্র বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজমুল দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাঠদান করাচ্ছেন । দ্বিতীয় শ্রেনীর ক্লাশ নেয়া শেষে তাকে ক্লাশ নিতে হবে শিশু শ্রেণীতে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান দাফতরিক কাজে ব্যস্ত। কাজী মজিবুর রহমান স্যার তখন অন্য ক্লাসে পাঠদান করাচ্ছেন। গত দের বছর ধরেই চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর পাঠদান করাচ্ছেন।
পঞ্চম শ্রেনির রুবেল,সাথী,স্বপ্না,মুক্তা,বেল্লালসহ বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা জানায়, স্যার যখন এক শ্রেনী কক্ষে পাঠদান করান তখন অন্য শ্রেনী কক্ষের শিক্ষার্থীদের বসে থাকতে হয়। একজন স্যার প্রতিদিন সকল ক্লাস নিতে পারেন না।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সারমিনের মা পারুল বেগম বলেন, স্কুলে শিক্ষক নেই। তাই মেয়ের পড়াশোনাও তেমন হচ্ছে না। অন্য স্কুল দূর হওয়ায় সেখানে দেওয়া সম্ভব না। দেড় বছর ধরে শুনছি নতুন শিক্ষক আসবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক আসে নাই। এতে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিস মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদান ছাড়াও সব ধরনের দাফতরিক কাজও তাঁকে করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন একজন শিক্ষককের পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষ দেয়া সম্ভব না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষক চেয়েছি কিন্তু দের বছরেও পাইনি।
তালতলী উপজেলা প্রাথমকি শিক্ষা অফিসার মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংঙ্কট রয়েছে। তারপরও গত মাসে ওই বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে দিয়েছি।
বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর বলেন, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের কথা আমার জানা আছে। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করব।
এমএইচএকে/কেএস