বরিশাল সাগরকন্যা অফিস॥
দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সকল কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকে শুরু করে মেডিকেল পরীক্ষা ও ময়নাতদন্তের কার্যক্রম সবই করে থাকেন ওই একজন চিকিৎসক। ফলে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহতর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর নিষ্পত্তিতেও বিলম্ব হচ্ছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগি অধ্যাপক, দুইজন সহকারি অধ্যাপক, তিনজন লেকচারার ও একজন মেডিকেল অফিসারসহ আটজনের পদ রয়েছে। এর অনুকূলে বর্তমানে ফরেনসিক বিভাগে রয়েছেন মাত্র একজন প্রভাষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই একজন প্রভাষকই কলেজের এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ার কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অন্য বিভাগের শিক্ষকরা তাকে সহয়তা করেন। তবে শিক্ষার্থীদের সার্বিক ভবিষ্যত ওই একজন প্রভাষকের ওপরই নির্ভর করছে। এর বাইরে ওই বিভাগে আদালত থেকে পাঠানো বিভিন্ন ধর্ষণ মামলায় ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ছেলে-মেয়েদের বয়স নির্ধারণসহ আরও অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। একইসাথে একজন চিকিৎসকের অধীনেই মর্গে আসা লাশগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে একজন চিকিৎসকের পক্ষে একসাথে এতোগুলো কাজ আলাদাভাবে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পরেছে। তাই প্রায়ই বিভিন্ন কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। অপরদিকে এই একজন চিকিৎসক যদি ছুটিতে থাকেন তাহলে পরতে হয় আরও বিড়ম্বনায়। যদিও ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষার ক্ষেত্রে আলাদা ও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে এ বিভাগটিতে।
হাসপাতালের শিক্ষক ও চিকিৎসক নেতারা বলছেন, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসকদের বাইরে প্রাকটিসের কোনো সুযোগ থাকেনা। এরপর আবার এই বিভাগটির দায়িত্বরতদের ওপর সামাজিক চাঁপও বেশি থাকে। নিরাপত্তাজনিত একটি বিষয়ও থাকে। এরমধ্যে আবার স্বাক্ষী দিতে আদালতেও যেতে হয়। যা কিনা অবসরের পরেও কয়েক বছর করতে হয়। কিন্তু সেই হিসেবে তারা আলাদা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন শিক্ষক থাকার কারণে ফরেনসিক মেডিসিনের বিষয়ে তাদের কাঙ্খিত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছেনা। শুধু শেবাচিম হাসপাতালেই নয়; গোটা দেশেই ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষক সংকট রয়েছে। সারাদেশে ৩৪ থেকে ৩৫টি মেডিকেল কলেজ থাকলেও অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র চারজন। পারিপার্শ্বিক কারণসহ সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় সিনিয়রদের যেমন আগ্রহ ছিলোনা এই বিষয়ে পড়াশোনা করার, তেমনি এখন বাস্তবতা দেখে আমরাও আগ্রহ হারাচ্ছি। বরিশাল জেলা বারের সাবেক সভাপতি, সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগটি আইন-আদালত অর্থাৎ বিচার বিভাগের সাথে জড়িত। এই বিভাগের মাধ্যমে ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়। ওই ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফরেনসিক রিপোর্ট প্রয়োজন হয়। যদি এ বিভাগে চিকিৎসক সংকট থাকলে সব কাজেই বিলম্ব দেখা দিতে পারে।
এ ব্যাপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন বলেন, বরিশালে এমনিতেই চিকিৎসকরা থাকতে চাচ্ছেন না। এর কারণ আগে খুঁজে বের করা উচিত। এ ছাড়া ফরেনসিক মেডিসিনসহ বেসিক সাবজেক্টগুলোতে চিকিৎসকরা কম ঝুঁকছেন। আমি মনে করি, বেসিক সাবজেক্টগুলোতে আলাদা কোনো সম্মানী দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করা হোক। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ সৈয়দ মাকসেমুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। এ সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে সারাদেশেই ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। কারণ ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়ে আসা চিকিৎসকের অনেক ঝামেলা পোহাতে হলেও সেই অনুযায়ী তাদের জন্য বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই অনেকেই ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না।
এফএন/এমআর