ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বাঙালি জাতির প্রতি পাকিস্তানিদের অত্যাচার-নিপীড়নের কথা স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, এদেশের মানুষই আন্দোলন করে পাকিস্তান সৃষ্টি করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর পাকিস্তান উর্দুকে মাতৃভাষা ঘোষণা করে। পাকিস্তানের অত্যাচার-নিপীড়নের কারণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ’ বিষয়ক আলোচনা ও মাসব্যাপী বই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালিদের মুক্তির জন্য ’৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেয় এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতাচেষ্টার বিরুদ্ধে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের অভিযোগ আনে। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, আমরা জনসংখ্যায় ৫৬ ভাগ, কিন্তু তারপরও আমরা সংখ্যালঘু। খরচ করার সময় বাঙালি পায় মাত্র ২০ শতাংশ। পাকিস্তানের অত্যাচার-নিপীড়নের কারণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধু তখন বলেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
মন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের সমর্থন ছিল শেখ মুজিবের প্রতি। তবে কিছু মোড়ল সেটার বিরোধিতা করেছে। তারপরও রাজনৈতিক কৌশলের কারণে মাত্র নয় মাসে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় আসে, তারা বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, দেশকে উন্নতবিশ্বের সারিতে নিয়ে গেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি উল্টোপথে চলার কারণে ৩০ বছর ক্ষমতায় থেকেও উন্নয়ন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে আর অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে না। এখন মাদকমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। প্রযুক্তির যুগে ফেসবুক ব্যবহারের যৌক্তিকতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সীমা না ছাড়ানোর আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের প্রতি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট এডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের (ইএসটিসিডিটি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, বই প্রদর্শন একটি মহৎ উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারাজীবনের প্রচেষ্টার ফসল আজকের বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আপসহীন নেতা ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন তিনি। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী বলেন, আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এমন একজন নেতা, যিনি কারাগারে থাকা সত্ত্বেও তার ডাকে মানুষ সাড়া দিয়ে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছে। তিনি বলেন, বই প্রদর্শনী তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এ বইমেলার অ্যাডভান্টেজ নিয়ে দেশ গড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ডায়নামিক লিডার। তার ক্যারেশমেটিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মিলান পাগন। বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরী। বই প্রদর্শনী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এতে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত প্রায় ২২০০ বই প্রদর্শন করা হবে।
এফএন/এমআর