ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে মিছিলটি শুরু হয়ে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বক্তারা উপাচার্যের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার দাবি করেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক রনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা স্বীকার করেছেন, উপাচার্য তাদের হলে টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। জনগণের রক্ত পানি করা টাকা লুটপাট মেনে নেওয়া হবে না। পদত্যাগের মাধ্যমে উপাচার্যকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, আমাদের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আপনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিন। নাহলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আপনার পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, সারাদেশের মানুষ জেনে গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ প্ল্যাটপর্মের অন্যতম সংগঠক আশিকুর রহমান বলেন, ট্যাক্সের টাকা ছাত্র নেতাদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। উপাচার্য সসম্মানে পদ ছেড়ে দেন, না দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পদ ছাড়তে বাধ্য করবে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তসলিমা নাসরিন বলেন, টাকা ভাগাভাগির মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার পর উপাচার্য আর কোনোভাবেই সম্মানীয় পদে থাকতে পারেন না। আমরা আজকের অবস্থানে আসতে বাধ্য হয়েছি। দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর আমরা কখনও বলিনি, তিনি দুর্নীতিবাজ। তবে তিনি তার কার্যক্রমের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ করছেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ফৌজদারি আইনে বিচার হওয়ার যোগ্য। এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, উপাচার্য উন্নয়ন প্রকল্পকে ব্যবসাক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার চাই। এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর কর্মস্থলে তাকে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই না। এর আগে বুধবার দুর্নীতির অভিযোগের বিচার-বিভাগীয় তদন্ত দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনা ফলপ্রসু না হওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি ও ভর্তি পরীক্ষায় ভবনগুলোতে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। স্বেচ্ছায় পদত্যাগে আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।
এফএন/এমআর